
চলমান সময়ের জন্য জরুরি লেখা।
লিখেছেনঃ আসিফ আদনান হাফি.
সামুদ জাতির গল্প মনে আছে? পাহাড় কেটে অনিন্দ্য সুন্দর প্রাসাদোপম সব স্থাপনা তৈরি করতো সামুদ। এখনো জর্ডানের পেত্রায় প্রায় অতিপ্রাকৃতিক গাথুনির কারুকাজে ভরা, অতিকায়, অদ্ভুত সুন্দর সব নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়।
সামুদ জাতির নবী ছিলেন সালিহ আলাইহিস সালাম। ওরা যখন নুবুওয়্যাতের প্রমান চাইলো, সালিহ আলাইহিস সালামের দু’আর জবাবে আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জাল প্রমান হিসেবে পাঠালেন একটি উটনী।
.
আমি তাদেরকে বোঝাবার জন্যে সামুদকে উষ্ট্রী দিয়েছিলাম। অতঃপর তারা তার প্রতি যুলুম করেছিল। আমি ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশেই নিদর্শন প্রেরণ করি। [সূরা ইসরা, ৫৯]
.
সামুদ জাতির মধ্যে কিছু লোক – অনেক মুফাসসিরিনের মতে ৯ জন – এ উটনীকে হত্যা করলো।। “অতঃপর পাকড়াও করল তাদেরকে ভূমিকম্প। ফলে সকাল বেলায় নিজ নিজ গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে রইল।“
.
যখন আল্লাহর আযাব আসলো, সেটা পুরো জাতির সবাইকেই গ্রাস করলো। যদিও এ জাতির সবাই সরাসরি উটনী হত্যায় জড়িত ছিল না। অধিকাংশই ছিল নিষ্ক্রিয় জনতা। নিরব দর্শক। অধিকাংশেরই এসব নিয়ে মাথা ব্যাথা ছিল না। তারা মেতে ছিল তাদের নিজ নিজ জীবন নিয়ে। টুকরো টুকরো আনন্দ-বেদনা-ভোগ-বিলাস নিয়ে। শান্তিতে, নির্ঝঞ্ঝাটে নিজেদের জীবন কাটিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছু নিয়ে তাদের তেমন একটা মাথাব্যাথা ছিল না। এসব ঝামেলায় তারা জড়াতে চায় নি। নিষ্ক্রিয় জনতা আদর্শ, ধর্ম কিংবা রাজনীতি নিয়ে আগ্রহী ছিল না – যেভাবে চলছে সবকিছু সেভাবেই চলতে থাক – এই ছিল তাদের চাওয়া।
.
“আমরা তো আমাদের ঘর-বাড়িতে নিরাপদেই আছি, আমাদের কিছুই আক্রান্ত করবে না”, নিষ্ক্রিয় জনতা ভেবেছিল।
.
কিন্তু আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জালের আযাব পাকড়াও তাদের সবাইকেই পাকড়াও করলো। যখন মহবিশ্বের, সমগ্র সৃষ্টির একচ্ছত্র অধিপতির পক্ষ থেকে শাস্তি আসলো তখন গ্রাস করলো সম্পুর্ণ জনপদকে। অধিকাংশের নিস্ক্রিয়তা, তাদের নিরবতা, তাদের গা বাচিয়ে চলার মানসিকতা, তাদের দেখেও না দেখা, শুনেও না শোনা আল্লাহর শাস্তি থেকে তাদের রক্ষা করতো পারলো না।
.
কেন?
.
কারন সত্য ও মিথ্যার দ্বন্দ্বে, হক্ব ও বাতিলের লড়াইয়ে, ঈমান ও কুফরের সংঘাতে নিরপেক্ষ অবস্থান বলে কিছু নেই। দুই নৌকায় পা রাখার কোন সুযোগ নেই। রাব্বুল আলামীন সেই অধিকার আমাদের দেন নি। হয় ইমানের তাবুতে অবস্থান নিতে হবে, নইলে আমার জায়গা হবে কুফরের তাবুতে। এ চিরন্তন সঙ্ঘাতে নিষ্ক্রিয়তার, নিরপেক্ষতার, গা বাঁচানোর কোন সুযোগ নেই।
.
ইমান ও কুফরের মাঝামাঝি কিছু নেই। তাওহিদ ও শিরকের মাঝে তৃতীয় কিছু নেই। সু্যোগ নেই দায়িত্ব এড়ানোর। প্রশ্নটা যখন ইমান ও কুফরের তখন মধ্যমপন্থা অবলম্বনের কোন সুযোগ নেই।
~~আল আমিন আনছারী~~