
বিয়েটা যদি এভাবে হত__!!
এক.
ছোট চাচ্চুর বয়স বাইশ বা তেইশ হবে। আগামীকাল ছোট চাচ্চুর বিয়ে। অথচ আমাদের ঘর দেখে বুঝার কোনো উপায় নেই, এই ঘরের কোনো ছেলের বিয়ে হচ্ছে। আমি যা দ্বীন পালন করি, সব ইন্সপায়ার ছোট চাচ্চু থেকে। আত্মীয়স্বজন কেউ আসে নি। এমনকি ফুফু, আপুরাও না। অবশ্য তাদের দাওয়াত দেওয়াও হয় নি। এখন রাত দশটা বাজে। ছোট চাচ্চুর কিছু বন্ধু এসেছে। সবাই ছাদের উপর আছে। আমাকে নাস্তা পরিবেশনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ছোট চাচ্চুর বন্ধুরা নাশিদ গাচ্ছে। কী সুন্দর বোকাল! এগারোটার দিকে তারা চলে গেল। পরে সবাই ঘুমিয়ে গেলাম। আমার জীবনে এই প্রথম দেখলাম, বিয়ের রাতে আত্মীয়স্বজনদের ঘুমাতে। আমিও তো কখনোই বিয়ের রাতে ঘুমাই নি। সারারাত হাই ভলিউমে আইটেম সং বাজত। ঘুমানোর চিন্তা করাও কঠিন ছিল।
দুই.
মেয়ের বাড়ি থেকে কিছুই দেওয়া হয় নি। কিছুই না বলতে, কিছুই না। ছোট চাচ্চু কাপড়ের ব্যবসা করেন। নিজের টাকা দিয়ে যা কিছু সংগ্রহ করা যায়, করেছেন। আমাদের জয়েন ফ্যামেলি। পর্দা করতে অসুবিধে হতে পারে বলে, ছোট চাচ্চু একটা বাসায় থাকবেন। বাড়ি থেকে বিশ টাকা বাড়া ওখানে যেতে। আমি দুদিন আগে একবার ওখানে গিয়েছিলাম। অল্প কিছু জিনিস সংগ্রহ করেছেন। দুটি সাধারণ রুম, রান্নাঘর আর একটি বাথরুম।
তিন.
আমরা সবমিলিয়ে এগারো জন যাচ্ছি কনের বাড়িতে। এগারো জনও হয়তো যাওয়া হত না, কনের বাবার জোরাজুরিতে যাওয়া হচ্ছে। মেয়ের বাড়ি দেখে আরও অবাক হলাম। আজ বিয়ে, অথচ কোনো হৈ-হুল্লোড় নেই, কোনো আয়োজন নেই। দুইদিন ধরে আমি শুধু অবাক হয়েই চলছি। মোহর পঞ্চাশ হাজার টাকা। আমি প্রথমে ভাবছি, ভুল শোনেছি। পরে শোনি, পঞ্চম হাজারই। নগদ। পঞ্চাশ হাজার শোনে, প্রথমে দুয়েকজন কথা তুললেও ছোট চাচ্চুর কথা শুনে সবাই নীরব হয়ে গেছে। ছোট চাচ্চু এরকম বলেছেন, ‘আমি বিয়ে তালাক দেয়ার জন্য করছি না। আল্লাহ না করুন, যদি কখনো তালাকের প্রয়োজন হয়, তাহলে কি টাকার অভাবে আমি ছেড়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকব। আমি আজীবনের জন্য আপনাদের মেয়ে নিতে এসেছি, ক্রয় করতে না।’ আমি খেয়াল করলাম, মেয়ের বাবার চোখে পানি চলে এসেছে। তিনি তো ছেলে যত দিবে, তাতেই সন্তুষ্ট ছিলেন। মসজিদে কবুল পড়ানো হল। পরে খেজুর ছিটিয়ে দেওয়া হল। আমরা সবাই চলে এলাম বাড়িতে। ছোট চাচ্চু আর চাচি আলাদা গাড়ি দিয়ে আসলেন।
চার.
একটা নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে আমাদের গ্রামে। ছোট চাচ্চুর বিয়ের পর গ্রামে অনেক ছেলে এভাবে বিয়ে করছে। একেবারে সাধারণভাবে। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, ইসলামে বিয়েটা অনেক সহজ। আমরাই বিয়েকে কঠিন করে ফেলেছি। ফলে জিনা বাড়ছে। কারও ক্ষুধা লাগলে তাকে যদি হালাল খাবার দেওয়া না হয়, তাহলে সে হারামের দিকে অগ্রসর হবে—এটাই স্বাভাবিক।
— লেখা: সংগৃহীত